বিরোধীদের পক্ষ হতে মুহাদ্দিছগণ এবং তাদের আনুগত্যকারীদের উপর এই অভিযোগটি অবিরত ধারায় করা হয়ে থাকে:
(১) আপনারা দু দু রাকআত কেন পড়েন যেখানে আয়েশার হাদীছে চার রাকআতের কথা উল্লেখ রয়েছে?
(২) আপনারা সমস্ত রমযান জামাআত সহকারে কেন পড়েন যেখানে নবী (ছা.) স্রেফ তিন দিন জামাআত করেছিলেন?
তাহলে নিবেদন হল যে, ছহীহ বুখারীর কোন হাদীছে এটা একেবারেই নেই যে, তিনি অত্র চার রাকআত এক সালামের সাথে পড়তেন। সুতরাং এই রেওয়ায়াতটিতে ‘ইজমাল’ (অস্পষ্টতা, দ্ব্যার্থবোধকতা) আছে। ছহীহ মুসলিমে আয়েশা (রা.) এর হাদীছে পরিষ্কার বিদ্যমান আছে যে, তিনি প্রত্যেক দু রাকআতের উপর (শেষে) সালাম ফেরাতেন। যেহেতু ছহীহ মুসলিমের রেওয়ায়াতটি মুফাস্সার (ব্যাখ্যাসম্বলিত) এবং স্পষ্ট, সেহেতু আমরা ছহীহ বুখারীর আয়েশা (রা.) এর হাদীছটির ঐ উদ্দেশ্যটিই বুঝেছি যেটি ছহীহ মুসলিমে আয়েশার হাদীছের মধ্যে রয়েছে। আমাদের নিকটে, হাদীছ হাদীছের ব্যাখ্যা প্রদান করে। আর ছহীহ হাদীছসমূহের মধ্যে কোনই অসঙ্গতি নেই। এটিও স্মর্তব্য যে, খাছ (শর্তযুক্ত বিধান) আমের (সার্বজনীন বিধানের) উপর, মানতূক্ব (স্পষ্ট ভাষ্য) মাফহূমের (মর্মের) উপর এবং ছরীহ (স্পষ্ট) মুবহামের (অস্পষ্টতার) উপর সর্বদাই অগ্রগণ্য হয়ে থাকে।
অবশিষ্ট রইল জামাআতের সহিত ছলাতের বিষয়টি; তো এই প্রসঙ্গে আমাদের নিকটে কতিপয় দলীল আছে। যেমন:
(১) রাসূল (ছা.) ক্বিয়ামে রমযানের (তারাবীহ) ছলাত জামাআতের সহিত (আদায় করার জন্য) খুবই উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا صَلَّى مَعَ الْإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ছলাত পড়ে (ঘর ইত্যাদি) ফিরে যায়, তার জন্য সারা রাত ক্বিয়ামের ছওয়াব রয়েছে (এই রেওয়ায়াতটি সুনানে তিরমিযী হা/৮০৬; সুনানে আবী দাঊদ হা/১৩৭৫, শব্দগুলি আবূ দাঊদের; সুনানে নাসাঈ হা/১৬০৬; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/১৩২৭; মুসনাদে আহমাদ হা/২১৭৪৯ ইত্যাদি গ্রন্থে রমযান শব্দটির স্পষ্টতার সাথে বিদ্যমান আছে)। মুহাম্মাদ বিন আলী আন-নিমাবী আছারুস সুনান গ্রন্থে (পৃ. ৩৮৭, হা/৭৬৮) এই রেওয়ায়াতটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘এর সনদটি ছহীহ’।
তার পূর্বে (ও) অসংখ্য আলেম একে ছহীহ বলেছেন। অভিযোগকারীদের অভিযোগসমূহের খন্ডনের জন্য স্রেফ এই একটি হাদীছই যথেষ্ট।
(২) রাসূল (ছা.) যদি কোন কাজ এক বার করে থাকেন তবে তা আমাদের জন্য উক্ত কাজটি করার বৈধতার শক্তিশালী দলীল হয়ে থাকে। সুনানে ইবনে মাজাহ (হা/৩৫৭৮), মুসনাদে আহমাদ (হা/৩০৬৩৯), মুসনাদে আবী দাঊদ ত্বায়ালিসী (হা/১০৭২) এবং ছহীহ ইবনে হিব্বান (আল-ইহসান হা/৫৪২৮, অন্য নুসখায় হা/৫৪৫২) গ্রন্থে হাদীছ আছে – সাইয়েদুনা কুর্রাহ (রা.) নবী (ছা.) এর নিকটে আসলেন। তখন দেখলেন যে, তার জামার বোতাম খোলা ছিল। এর পর মুআবিয়া বিন কুর্রাহ এবং তার পুত্রকে সর্বদা বোতাম খোলা অবস্থায় দেখা যেত (মুসনাদে আলী ইবনুল জাদ হা/২৭৭৫)।
এখন এই দাবী করা যে, আমরা স্রেফ ঐ কাজটিই করব যেটি নবী (ছা.) বার বার কিংবা নিয়মিত করেছেন; তাহলে আমরা এই দাবীকে সঠিক মনে করি না। আমাদের জন্য তো রাসূল (ছা.) এর একটি ওয়াক্তের (সময়ের) কাজও দলীল হয়ে থাকে। শর্ত হল, ‘নাসখ’ বা ‘তাখছীছ’ প্রমাণিত না হয়ে যায়।
[কোন বিধান রহিত করাকে নাসখ বলা হয়। রহিত বিধানটিকে মানসূখ এবং রহিতকারীকে নাসেখ বলা হয়। আর রহিতকরণকে নাসখ বলা হয়। আর কোন বিধানকে কোন শর্তে নির্দিষ্ট করাকে ‘তাখছীছ’ বা ‘খাছ করণ’ বলে। যেমন নবী (ছা.) চারটির অধিক বিবাহ করেছেন। কিন্তু আমাদের জন্য তা হারাম। শুধুমাত্র নবীর জন্য চারের অধিক বিবাহের বিধানটি তার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। একেই বলা হয় ‘তাখছীছ’ বা খাছ করণ। – অনুবাদক]
(৩) রাসূল (ছা.) তিন দিনের অধিক জামাআত না করানোর কারণ বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, এর ফরয হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী ‘ফায়যুল বারী’ (২/৩৩৭) গ্রন্থে ‘কিন্তু আমি তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলাম’ (বুখারী হা/২০১২) হাদীছটি সম্পর্কে বলেছেন যে, ‘অর্থাৎ এই হাদীছ দ্বারা উদ্দেশ্য হল জামাআত সহকারে ছলাত’। এখন যেহেতু এই কারণটি দুরিভূত হয়ে গিয়েছে; সেহেতু সর্বদার জন্য এই জামাআতটি ক্বায়েম করার প্রমাণ পাওয়া গেল।
(৪) আমীরুল মুমিনীন ওমর (রা.) ক্বিয়ামে রমযানের (তাক্বলীদপন্থীদের স্বীকারোক্তি অনুসারে এগারো রাকআত তারাবীহ) জামাআত করিয়েছিলেন। এবং কেউই তার উপর অভিযোগ করেন নি। সুতরাং বৈধতা প্রমাণিত হয়ে গেল। এটিও মনে রাখতে হবে যে, খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাতের উপর আমল করার হুকুম নবী (ছা.) স্বীয় যবান মোবারক দ্বারা প্রদান করেছেন। সুতরাং অভিযোগকারীদের সকল অভিযোগ বাতিল প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ।
এ প্রবন্ধটি পি. ডি. এফ ফর্মেট এ পড়ার জন্য এই লেখাটির উপর ক্লিক করুণ।
মূল: শায়খ যুবায়ের আলী যাই (রহ.)
অনুবাদ: আহমাদুল্লাহ
পরিবেশনায়: সত্যান্বেষী রিসার্চ টীম
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না।